You are currently viewing Jobanbondi – a confession

Jobanbondi – a confession

আমরা নানান কাণ্ড কারখানা করি এখন। এই ফেসবুকে ইন্সটাগ্রামে রীল করছি, নয়ত পোস্ট দিচ্ছি নানান কায়দার ছবি দিয়ে বা ভিডিও দিয়ে বা লাইভ করে। এখন করছি নিজের ওয়েবসাইটের ব্লগপোস্ট। এত কিছুর একটাই উদ্দেশ্য, ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে জানান দেওয়া, ‘শুনুন শুনুন শুনুন …  শুনুন না ! আমার নতুন গান বেরিয়েছে…একবার শুনে দেখুন না! ভাল না লাগলে আর শুনবেন না না হয়!’

মানে সত্যিই কি নতুন গানের অবস্থা এতটাই খারাপ? এত বছর গানবাজনা করার পরেও নতুন গান বের করে একে ফ্রিতে শোনাব, তায় আবার এত কাণ্ড করে ফেরিওয়ালার মতন গান ফেরি করতে হবে!?? যদি শ্রোতা বন্ধুরা অনুগ্রহ করে শোনেন …  না না পয়সা দিতে হবে না, শুনুন শুধু। ভাল লাগলে আবার শুনুন, অন্যকে শোনান, ইত্যাদি ইত্যাদি…  

কী ভীষণ সস্তা লাগছে না পুরো বিষয়টা? মুড়ি মুড়কি এক হয়ে গেল তো এই ফেরির চক্করে! এই জন্যই কি নিয়মিত পরিচিত শ্রোতাদেরও নতুন গান শোনার আগ্রহ আগের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে? এইজন্যই কি মানুষ ‘খুব ভাল’, ‘ভাল’, ‘মোটামুটি’ আর ‘বাজে’র মধ্যে ফারাক করতে পারছেন না? নির্ভর করতে হচ্ছে কত ভিউস, কত ফলোয়ার, কতটা ভাইরাল তার উপর? 

জানি উপরের কথাগুলো খুব কঠিন আর তেতো হলেও সত্যি কথা। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও সত্যি যে গান তো এত ভেবে বেরোয় না। গান মাঝে মাঝে নদীর মতন পাথর ভেঙে এগিয়ে যায়, গান মাঝে মাঝে বৃষ্টির মতন শুকনো মাটিতে আচম্বিতে ঝরে পড়ে আবার কখনও রক্তের মতন, কেটে গেলে চুইয়ে পড়ে, কখনও বমির মতন অনেক আটকাতে চাইলেও বেরিয়ে আসে। এবার বেরিয়ে তো আসে, তারপর কী করব? রেখে দেব মেশিন বন্দী করে? শুনব শুধু আমি আর যারা আমার গানের জন্য পাগল সেই গুটিকয়েক ক্ষ্যাপা লোকজন কোনও ব্যক্তিগত মাধ্যমে? নাকি পাবলিক ডোমেইনে  ডকুমেন্ট করে রেখে যাব আগামী এমন একটা সময়ের জন্য, যেদিন হয়ত সত্যিই ফিরে দেখা হবে … উল্টে দেখা হবে ইতিহাসের পাতা, সময়ের দলিল। যেদিন মানুষ বুঝবে এমন একটা সময় পৃথিবীতে এসেছিল যখন মানুষ লক্ষ লক্ষ মধ্যমেধার ভিড়ে দিশেহারা হয়ে নতুন ভাল কবিতা শোনার আগ্রহ হারিয়েছিল, নতুন ভাল গান শোনার খিদে মরে গিয়েছিল, নতুন সৃষ্টির দাম একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছিল। যে পৃথিবীতে জয় গোস্বামীরা কবিতা প্রকাশ করা ছেড়ে দিলেও কারোর কিচ্ছু এসে যায় না, শিলাজিৎ মজুমদার বা রূপম ইসলামরা নতুন গান প্রকাশ করা ছেড়ে দিলেও কারও এক বিন্দু হেলদোল থাকে না , ঠিক সেই পৃথিবীতে ঐ ভয়ঙ্কর বিরাট নয়েজের মধ্যেও কেউ কেউ কিন্তু আশা ছাড়েনি। কেউ কেউ চেষ্টা করে গেছে অন্তর থেকে, নিজের সবটুকু দিয়ে এই পৃথিবীকে নতুন কিছু দিয়ে যাওয়ার, সৎ কিছু দিয়ে যাওয়ার, মৌলিক কিছু দিয়ে যাওয়ার। সেই দূর কাল্পনিক ভবিষ্যৎ যুগে হয়ত মানুষের আবার ভালকে ভাল খারাপকে খারাপ চিহ্নিত করার মতন, স্পষ্ট করে বলার মতন বোধ আর সাহস দুইই ফিরে আসবে। সেদিন যদি এই অধমের গানও খানিকটা দাম পায়। যেমন পেয়েছে আজ থেকে ১৫ বছর আগের লেখা আসবেই ভোর, স্বপ্ন নয় কিংবা থাক (ব্যান্ডটা যখন আস্ত ছিল তখন যদি এই দামটা পেত, বলা যায় না ব্যান্ডটা হয়ত আজও নিজ মহিমায় বহাল থাকত) 

তবে ১৫ বছর তো অনেক কম সময়। আরও কয়েকগুণ বেশি সময় লাগবে হয়ত, কিন্তু যদি সত্যিই গানগুলো সৎ হয়, মৌলিক হয়, ভাল হয় তাহলে আমার বিশ্বাস এই গানগুলোও থেকে যাবে। থেকে যাবে জবানবন্দী, কিংবা ঘুরে দাঁড়াই, কিংবা সফরনামা। এই গানগুলোও কিছু না কিছুভাবে বার বার ফিরে আসবে। সেইদিনটা দেখে যাওয়ার জন্য হয়ত আমি নিজেই সশরীরে থাকতে পারব না … এই যা! 

এক বন্ধু জিজ্ঞেস করছিলেন এই ভিড়ে আর গান কেন রিলিজ করছিস? আজ জবাবটা দিলাম। 

ভাল থাকুন। মনেপ্রাণে মানুষ থাকুন, আপনার আশেপাশে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে জানেন, আপনাকে যন্ত্র বানিয়ে ফেলবার, আপনাকেই কমোডিটি বানিয়ে ফেলবার। হতে দেবেন না। রুখে দাঁড়ান।

This Post Has 2 Comments

  1. RAJARSHI

    একদম ঠিক বললে তমাল। আমার কথাই বলছি, ৪০ বছর পেরিয়ে যখন আশেপাশের মানুষ গুলোকে পরিবর্তন হতে দেখছি, স্বার্থের জন্য সম্পর্ক বিষিয়ে দিতে দেখছি, ঠিক তখনই তোমার মতন একজনের সংস্পর্শে এলাম। আর আমার মানুষ, বন্ধুত্ব সম্পর্কে গুলিয়ে যাওয়া ধারণাটা আবার সরলরেখায় ফিরে এলো। 💚 বেঁচে থাকুক তোমার গান যাপন💚

    1. Tamal

      তুমিও মোক্ষম সময়ে এসেছ জীবনে রাজর্ষি! আমাদের শীতকালীন প্রোগ্রামটা এবার পাক্কা করো তো দেখি

Leave a Reply